• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯

সারা দেশ

হোয়াটসঅ্যাপে ট্রেনের টিকিট!

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ০৩ এপ্রিল ২০২৪

নিজস্ব প্রতিনিধি:

ঈদে নিরাপদ ও আরামদায়ক বাহন হিসেবে বেশিরভাগ যাত্রীই ট্রেন যাত্রাকে পছন্দ করেন। আর ঈদকে কেন্দ্র করে সক্রিয়া হয়ে উঠে কালোবাজারিরা। ঈদযাত্রায় ট্রেনের বিভিন্ন রুটের টিকিট অনলাইন বা কাউন্টারে পাওয়া না গেলেও সেই টিকিট পাওয়া যায় কালোবাজারিদের কাছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা দিলেই হোয়াটসঅ্যাপে টিকিট পাঠিয়ে দেয় তারা। তাদের কাছেই আবার অগ্রিম ট্রেনের টিকিটের অর্ডারও দেওয়া যায়। তবে সেই ক্ষেত্রে ৩৬০ টাকা মূল্যের একটি টিকিট পেতে গুনতে হয় ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা।

বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার জংশন স্টেশনকে উওরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বলা হয়। প্রতিদিন অর্ধশতাধিক ট্রেনে হাজার হাজার যাত্রী চলাচল করে এই স্টেশন দিয়ে। তবে সারা বছরই ট্রেনের টিকেট যেন সোনার হরিণ এই জংশন স্টেশনে। আর যেকোনো উৎসে ট্রেনের টিকেটের দাম বাড়ে ৩ থেকে ৪ গুণ।

নাইম ইসলাম নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমার চাচাত ভাই ঢাকা থেকে সান্তাহারে আসবে এপ্রিলের ৮ তারিখে। সে অনলাইন থেকে কোনো টিকিট কাটতে পারে নাই। বিষয়টি আমাকে ফোনে জানালে আমি কালোবাজারির কাছে থেকে বাধ্য হয়ে টিকিট নিতে। সান্তাহারের কারোবাজারিরা আমাকে শোভন চেয়ারের একটি টিকিট হোয়াটসঅ্যাপে পাঠায়। টিকেটের গায়ে ৩৬০ টাকা মূল্য থাকলেও আমার কাছে থেকে মোবাইল ব্যাংকিয়ের মাধ্যমে ১৩০০ টাকা নিয়েছে।

সান্তাহার রেলওয়ে টিকেট কাউন্টারের আশেপাশের কম্পিউটারের দোকান থেকে পানের দোকান প্রায় সব দোকানেই কালোবাজারে বিক্রয় হয় ট্রেনের টিকেট। তবে এবার দোকানে টিকেট বিক্রয়ের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করেও টিকেট বিক্রি শুরু করেছে কালোবাজারিরা।

ট্রেনের টিকিট বিক্রিতে কালোবাজারি বন্ধে গত বছর ১ মার্চ থেকে ‘টিকিট যার, ভ্রমণ তার’ এমন শ্লোগানকে সামনে রেখে অনলাইনে ও অফলাইনে আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দিয়ে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। পাশাপাশি ঈদ উপলক্ষে এবারই প্রথম মোবাইলে ওটিপি (ওয়ানটাইম পাসওয়ার্ড) সিস্টেম চালু করা হয়েছে। এবার ঈদযাত্রার টিকিট বিক্রি শুরুর আগে রেলওয়ের কর্মকর্তারা আশা করেছিলেন ওটিপি পাঠানোর এ পদ্ধতি নতুন চালু হওয়ায় টিকিট নিয়ে কারসাজি অনেকটা কমবে। কিন্তু বাস্তবতা কমেনি।

শনিবার (৩০ মার্চ) রাতে সান্তাহার স্টেশনের রেলওয়ে কাউন্টারের বাইরে মাদুরে উপর শুয়ে থাকা এক দিন মজুরের সাথে কথা হয় । তিনি জানান গত দুই থেকে তিন দিন আগে একজন লোক তার কাছে এসেছিল। তার মোবাইল নাম্বার ও এনআইডির ছবি উঠিয়ে নিয়ে তাকে ৫০ টাকা দিয়ে যায়। যাওয়ার আগে বলে যায় তার মোবাইল নাম্বারটি আবার প্রয়োজন হবে। তখন আরও ৫০ টাকা দেওয়া হবে।

সেই দিন মজুরের মোবাইলের মেসেজ অপশানে গিয়ে দেখা যায় গত (২৭ মার্চ) রেলওয়ের টিকেট কাটার জন্য তার মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। মোবাইল দিয়ে কিভাবে টিকিট কাটতে হয় তার কিছুই জানেন না বলে তিনি জানান।

ইমন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি ঈদে পরে ঢাকা যাবো। ঈদে বাড়ি আসার জন্য কালোবাজারির কাছ থেকে স্নিগ্ধার দুটি টিকিট নিয়েছি ঢাকা থেকে সান্তাহার পর্যন্ত। এতে আমার খরচ পড়েছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার টাকা। আবার ঈদ শেষে আমি ঢাকায় ফেরার জন্য কালোবাজারির কাছেই অগ্রিম দুটি টিকেট অর্ডার দিয়েছি।

নাম পরিচয় গোপন করার শর্তে এক টিকিট কালোবাজারির এক সদস্য  বলেন, করোনা কালীন সময়ে যখন ট্রেন বাদে সকল যানবাহন বন্ধ ছিল তখন থেকেই আমি এই টিকিট বিক্রির সঙ্গে জড়িত। আগে আমরা ট্রেনের সব টিকিট কেটে কাউন্টারের সামনেই কালোবাজারে বিক্রি করতে পারতাম। তবে এখন প্রকাশ্যে টিকিট বিক্রয় করতে পারি না পুলিশের ভয়ে। তবে আগে টিকিট নিয়ে আমরা যাত্রীদের কাছে যেতাম আর এখন যাত্রীরা টিকিট নিতে আমাদের কাছে আসে। এছাড়াও আমার এখন অগ্রিম টিকিটও বুক নিয়ে থাকি।

কালোবাজারির আরও এক সদস্য বলেন, তারা অনলাইন থেকে যেকোনো পরিচয়পত্র দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করেন। অন্যের পরিচয়পত্র দিয়ে টিকিট তারা সংগ্রহ করলেও বিক্রির সময় যাত্রীর পরিচয়পত্র দিয়ে সেই টিকিট দেওয়া হয়। যার ফলে টিকেট কালোবাজার থেকে নেওয়া কিনা না তা বোঝার কোনো উপায় থাকে না।

টিকেট কালোবাজারির এই চক্রটির তথ্য পুলিশের কাছে থাকলেও দুই একজন পুলিশের হাতে ধরা পড়ছে। তবে টিকিট কালোবাজারির মূলহোতারা থেকে যাচ্ছে আড়ালে। যাত্রীদের অভিযোগ যদি সাধারণ যাত্রীরা কালোবাজারিদের কাছে থেকে টিকেট সংগ্রহ করতে পারে। তাদের চিনতে পারে তাহলে পুলিশ কেন তাদের আইনের আওতায় আনছে না। নাকি পুলিশের যোগসাজগেই চলছে টিকেট কালোবাজারিরা।

এ বিষয়ে সান্তাহার নিরাপত্তা বাহিনীর পরিদর্শক নূর এ নবী বলেন, সান্তাহারে আমরাই প্রথম টিকেট কালোবাজারিকে গ্রেপ্তার করি। ঈদ আসলে কালোবাজারি সক্রিয় হয়ে উঠে। আমাদের গোয়েন্দারা মাঠে কাজ করছেন। যেকোনো সময় আমরা কালোবাজারিদের গ্রেপ্তার করতে পারবো বলে আশা করছি।

সান্তাহার রেলওয়ে থানার ওসি মোক্তার হোসেন বলেন, টিকেট কালোবাজারি হক বা যেকোনো অপরাধ হোক। আমি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads